অনেক মেয়ের বেলায়ই দেখেছি, আইলাইনার, মাশকারা আর আইশ্যাডো ব্যবহারে তাদের চোখ যতটা সুন্দর দেখায়, তাদের চাহনি যতটা আকর্ষণ করে, এমনিতে ঠিক সেই সৌন্দর্যটা প্রকাশ পায় না। কেউ কেউ তো আবার ব্যাঙস কাট দিয়ে কিছু চুল কপালের উপর এমনভাবে ফেলে রাখে যে চাহনি তো দূর, চোখ দুটোই ঠিকমতো দেখা যায় না! নিঝুমের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা মোটেও সেরকম না। প্রসাধনী বা বর্ণিল লেন্সের কৃত্রিমতায় নয়, ওর চাহনির যেন একটা প্রাকৃতিক ভাষা আছে। বর্ষণমুখর প্রকৃতি যেমন আমাদের অনুভূতিকে নাড়া দেয়, ওর চোখদুটোও তেমনি প্রভাবিত করে মনকে। বিশ্বাস করুন, মোটেও বানিয়ে বলছি না।
 
আমাদের পরিচয়টা ফেসবুকে। প্রোফাইলের ছবিতে মোমের আলোয় ওর সুন্দর চোখদুটোর মায়াবী চাহনি দেখে ভালো লেগে যায়। বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠাই, ও সাড়া দেয়। তারপর চিটচ্যাটে হাই-হ্যালো দিয়ে শুরু। সম্পূর্ণ অপরিচিত একজনের সাথে এভাবে বন্ধুত্ব তৈরি করা নিয়ে আমার মাঝে যে তখন একটা সংশয় কাজ করেনি- তা নয়, তবে প্রবাসজীবনের নিঃসঙ্গতার মাঝে মনের একান্ত কথাগুলো প্রকাশ করার কোনো বিকল্পও মাথায় আসেনি। অনেক সময়ই তো এমন হয়, অনেক কাছের মানুষকেও যে কথাগুলো বলতে গিয়ে আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগি, দেখা যায় অপরিচিত কারও সাথে সেগুলো অকপটে বলে যাই। প্রথম প্রথম নিঝুমের সাথে আমার তেমনই একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে। পড়াশোনা আর পার্টটাইমের ফাঁকে সময় পেলেই ওর সাথে ভাবের বিনিময় চলত। ওকে অনলাইনে না পেলে কেমন যেন একটা শূন্যতা কাজ করত ভেতরে ভেতরে, বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে। তখন ওর প্রোফাইল খুলে বসে থাকতাম, ওর ছবি দেখতাম। মিডিয়া প্লেয়ারে গান বাজত, রবি ঠাকুরের এই লাইনগুলো দারুণভাবে মিলে যেত আবহের সাথে- 
তুমি কথা কোয়ো না, তুমি চেয়ে চলে যাও।
এই চাঁদের আলোতে তুমি হেসে গ’লে যাও।
আমি ঘুমের ঘোরে চাঁদের পানে চেয়ে থাকি মধুর প্রাণে,
তোমার আঁখির মতন দুটি তারা ঢালুক কিরণধারা ॥ 
একটা সময় খেয়াল হলো, আমাদের সম্পর্কটা কেবল বন্ধুত্বের হলেও ও যেন আমার বন্ধুর চেয়েও একটু বেশি কিছু হয়ে গেছে এই ক’দিনে। প্রেমের দেবতা কিউপিড ভালোবাসার তীর কখন ছুঁড়েছিল বলতে পারব না, তবে তা একদম জায়গামত বিঁধেছিল। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছিল, অনুভূতিগুলো মেঘের ভেলায় ভাসছিল, গুনগুনিয়ে গাইছিলাম... আমার অবস্থা দেখে ভিনদেশি সহপাঠীরা জিজ্ঞেস করতে লাগলো, “হেই ড্যুড, হোয়াট হ্যাপেন্ড? আর ইউ ইন লাভ?” 
কখনও কখনও মৌনতাই অনেক কিছু বলে দেয়, কখনও আবার অনেক ব্যাখ্যা করেও কিছু ভাব প্রকাশ করা যায় না- আমার এসবের ঊর্ধ্বে উঠে সারা পৃথিবীকে চিৎকার দিয়ে জানান দিতে ইচ্ছে করছিল, “আই এম ইন লাভ!”
শুধু নিঝুমকেই বলাটা বাকি ছিল। বিশেষ দিন খুঁজছিলাম। ভ্যালেন্টাইন ডে আসতে প্রায় দুই মাসের মতন বাকি, অথচ আমার যে দেরি সইছে না! সামনের থার্টি ফার্স্ট নাইটকেই তাই বিশেষ দিন হিসেবে বেছে নিলাম, নতুন বছরে আমাদের নতুন সম্পর্কের শুরু হবে- এই ভেবে।
ব্যস্ততায় সময় খুব তাড়াতাড়ি গত হয়, কিন্তু অপেক্ষায় খুব ধীরে। দিনের হিসেবে ছয়, ঘন্টার হিসেবে একশ চুয়াল্লিশ আর মিনিটের হিসেবে আট হাজার ছয়শো চল্লিশ- সময়ের দীর্ঘসূত্রিতা কাটিয়ে অবশেষে কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তটি এলো। কীভাবে শুরু করব বুঝতে পারছিলাম না। জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা, আমাদের কি কখনও দেখা হবে না?
ও লিখল, দেখা না হলে ক্ষতি কী! হটাৎ এই প্রশ্ন?
- না, তোমাকে কিছু বলার ছিল...
- কী?
- নিঝুম...
- হুম
- আই এম ইন লাভ উইথ ইউ!
- আজব!
- প্লিজ! এখন টিপিক্যাল মেয়েদের মতো বলো না যে আমাকে তুমি কেবল বন্ধু হিসেবে দেখো।
- না, তা না। কিন্তু আমার সম্পর্কে সব না জেনে...
- আমি যেটুকু জানি...
- তুমি কিছুই জানো না। 
- মানে?
- তুমি কেবল আমার একাকীত্বের কথা জানো, কিন্ত তার কারণ কি জানো?
-উহু
- আমি আগেও বলতে চেয়েছি, বলতে পারিনি, কিন্তু আজ বলছি...
এরপর নিঝুম একে একে লিখে গেল, আর আমি অস্থিরচিত্তে পড়তে থাকলাম।
- এইচএসসির পরপর ভার্সিটি অ্যাডমিশনের জন্য একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হই। সেখানে নাভিদ নামে একটা ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক হয়। ওকে এতোটাই বিশ্বাস করে ফেলি যে সমাজিক রীতি-নীতির ঊর্ধ্বে যেতেও ভয় হয়নি। বিশ্বাস ভাঙল তখন, যখন জানতে পারলাম গোপন ক্যামেরায় ও আমাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো ভিডিও করে রাখত, শুধু তা-ই নয়, সেগুলো ও অন্যান্য ছেলেদের সাথে শেয়ারও করত। আরও হতবাক হলাম, এই কাজ নাকি ও আরও অনেক মেয়ের সাথে করেছে। আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেলো, সেই সাথে ভবিষ্যতও। আমার জন্য যে আমার পরিবারকে কতোটা অপমানিত হতে হয়েছে তা কেবল আমি জানি। প্লিজ, আমাকে ভুলে যাও, পান্থ। আমি কারও প্রিয়া হতে পারি না...
সব জানার পর আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার জন্য বাইরে বর্ণিল আতশবাজি হচ্ছে, চারপাশে উৎসবের আমেজ। অথচ আমার ভেতরটা পুড়ে অঙ্গার হচ্ছে। আশ্চর্য! এই কয়দিনে নিঝুমের চাহনির মাঝে আমি এতো কিছু খুঁজে পেলাম, অথচ ওর চাপা যন্ত্রণাটা আমার চোখ এড়িয়ে গেলো! 
 
 
            
                        
            
            
            
                        
            
            
                        
            
         
        
               
   
    
                    
        
        
            
            
                 ০৩ ফেব্রুয়ারী  - ২০১১ 
                                        
                            গল্প/কবিতা:
                            ১০ টি
                        
                    
            
            
         
     
    
        
বিজ্ঞপ্তি
        এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
    
    
        প্রতি মাসেই পুরস্কার
        
            বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
        
        
            লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
            
                - 
                    
                    
                        প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                     
- 
                    
                    
                        দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                     
- 
                    
                    
                        তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
                     
 
     
    
        
        বিজ্ঞপ্তি
        “নভেম্বর ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ নভেম্বর, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
        প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী